হাকালুকি হাওড় ভ্রমণ

হাকালুকি হাওড় ভ্রমন:
  
                                                               হাকালুকি হাওর
বর্ষা এবং শীত উভয় ঋতুই সিলেটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য উপযোগী। অন্যান্য দর্শনীয় জায়গাগুলোর সাথে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এশিয়া মহাদেশ তথা বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ হাকালুকি থেকে।
হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অপূর্ব লীলাভূমি হাওরটি বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে অপরূপ দৃশ্যের। দেশের বৃহত্তম এই হাওর অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানিরও জলাভূমি। পূর্বে পাথারিয়া ও মাধব পাহাড় এবং পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড় পরিবেষ্টিত হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিস্তৃত। ছোট-বড় ২৪০ টি বিল ও ছোট-বড় ১০ টি নদী নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর বর্ষাকালে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় পরিণত হয়। এই হাওরে বাংলাদেশের মোট জলজ উদ্ভিদের অর্ধেকের বেশি এবং সঙ্কটাপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি পাওয়া যায়। পাঁচটি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওরটি সিলেট ও সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। হাওরের ৪০% অংশ বড়লেখা, ৩০% কুলাউড়া, ১৫% ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০% গোলাপগঞ্জ এবং ৫% বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। ২৩৮টি বিল নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওরের বিলগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্ষাকালে এই হাওরে ধারণ করে এক অনবদ্য রূপ। চারদিকে শুধু পানি আর পানির খেলা, বিস্তৃত জলরাশি এ হাওরের রূপ ঠিক যেন ভাসমান সাগর। আদিগন্তু বিস্তৃত জলরাশি। জলের মাঝে মাঝে দুই-একটি বর্ষীয়ান হিজল, তমাল বৃক্ষ। সে এক অপরূপ দৃশ্য। হাকালুকি হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪১৭ প্রজাতির পাখি, এর মধ্যে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি। এছাড়া ১৪১ প্রজাতির অনান্য বন্যপ্রাণী, ১০৭ প্রজাতির মাছ, তন্মধ্যে ৩২ প্রজাতি বিভিন্ন পর্যায়ে বিপন্নপ্রায়। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ, জলজ ও স্থলজ ক্ষুদ্র অনুজীব।
                                                হাকালুকির পাখির মেলা 
 
শীতকালে এ হাওড়কে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। শীতকালে বিস্তৃত এই হাওর ধু-ধু সবুজপ্রান্তর, কোথাও বা ধান ক্ষেত এবং খানাখন্দ নিচু ভূমিতে প্রায় ২৩৮ টি বিলের সমষ্টি। হাকালুকি হাওর মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত জলাভূমি। শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর নানা পাখি পরিযায়ী হয়ে আসে। এছাড়া স্থানীয় প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি সারাবছর এখানে দেখা মেলে। বিলগুলিতে প্রায় সারাবছর পানি থাকে। হাওরের জলরাশির মূল প্রবাহ হলো জুরী ও পানাই নদী। এই বিলগুলি মৎস্য সম্পদের আধার। বছরে প্রায় ২৫০০টন মাছ উৎপাদন হয়। তবে যথেচ্ছভাবে মাছ ধরার কারণে দেশী জাতের রানী, তুরাল, রাঁচি, বাতাসি, গলদাচিংড়ি, বাঘমাছ, চিতল ইত্যাদি মাছ আর এখন হাওরে পাওয়া যায় না।হাওরে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি জলচর পাখির। শীত মৌসুমে ৪৮ প্রজাতির প্রায় ১ লাখ পাখি আসে। এসব অতিথি পাখির মধ্যে ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, বালি হাঁস, গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল, রাজ সরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পানকৌড়ি.বেগুনী কালিম, মেটেমাথা টিটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার।তবে অবশ্যই বিল মালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।
যেভাবে আসবেনঃ ঢাকা> বড়লেখা বাস ভাড়া (৩০০-৫০০) টাকা,বড়লেখা থেকে লোকাল সি,এন,জি করে কানোনগো বাজার জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা, কানোনগো বাজার থেকে লোকাল সি,এন,জি করে কুটাউরা বাজার জনপ্রতি ভাড়া ১৫ টাকা, কুটাউরা বাজার থেকে পাখি দর্শন টাওয়ার সি.এন.জি রিজার্ভ ৫০-৮০ টাকা,অথবা পায়ে হেটে যেতে পারেন রাস্তার শেষ সিমান্তে পাখি দর্শন টাওয়ার। বিকেল বেলা আসার পথে হাল্লা গ্রামের মরহুম মনোহর মাষ্টারের বাড়ি (পাখি বাড়ি) ঘুরে দেখতে পারেন অজশ্র পাখীর অভ্যাশ্রম... যেখান থেকে উপভোগ করতে পারেন হাকালুকির সৌন্দর্য...
চাইলে ঢাকা থেকে রাতের ১১.০০ বাসে এসে সারাদিন #মাধবকুন্ড #খাসিয়া পল্লি #মুনিপুরি তাঁতশিল্প #চা_বাগান #হাকালুকি ঘুরে আবার রাতের বাসে ঢাকা চলে যেতে পারবেন...
ভোর সকালে হোটেল উঠে কিছু সময় বিশ্রাম, বিকেল থেকে রাত্রে বাস ছাড়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত থাকলেন... ১০০-২০০ টাকায় হবে...

লেখকঃ Msu Rana

Comments

Popular posts from this blog

University of Chittagong

Furamon Pahar(ফুরামন পাহাড়)

Bashbaria Sea Beach